শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধির পথ যাত্রায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরাম (বিডিএফ)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জহানান তিনি। খবর বাসসের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশের পরিবর্তন ও জলবায়ু সংক্রান্ত হুমকির মোকাবেলা করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।
‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, এজন্য উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে উন্নত দেশসমূহকে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আসন্ন সমস্যার প্রতি আরো মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি বলেন, চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আমরা আর্ন্তজাতিক সহযোগী দেশ ও সংস্থাসমূহসহ ব্যক্তিখাতের অংশীদারিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মহাপরিচারক এবং সিইও অব ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) সুলেমান জাসির আল হার্বিশ, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যানেট ডিক্সন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়েনচাই জ্যাং, জাপানের মিনিষ্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্সের উপ মহাপরিচালক মিনরু মসুজিমা এবং রেনজি তেরিঙ্ক, রাষ্ট্রদূতগণ এবং বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিগণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বৈদেশিক সম্পদ বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের কূটনিতিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র পরিবেশিত হয়।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ) একটি উচ্চ পর্যায়ের ইভেন্ট যেখানে সরকার এবং তার উন্নয়ন অংশীদারদের নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য আরও অংশীদারিত্ব আবিস্কার করতে কাজ করে।
এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অংশীদারিত্ব বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে বিভিন্ন গবেষক, সুশীল সমাজের প্রাতনিধি, সরকারি নীতি নির্ধারক এবং সহযোগী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নেতৃবৃন্দ সমবেত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ইউএনসিডিপি’র ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ এলডিসি হতে উত্তরণের যোগ্যতা লাভ করবে। এলডিসি’র থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশসমূহের সমকক্ষ হবে।
তিনি বলেন, তবে, এলডিসি হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করে যা গ্রাজুয়েশনের পর বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং কার্যক্ষেত্রে প্রস্তুতির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ এর প্রভাব মোকাবিলায় কৌশলগত প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ আখ্যায়িত করে বলেন, বিশ্বের বুকে একটি গতিশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার প্রত্যয় ও উপকরণ আমাদের রয়েছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের এই বৈঠক দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীলতাকে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি করে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতাগুলো আংশিকভাবে পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। শিক্ষা ও দক্ষতার সঠিক ব্যবহারের ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নসহ রেমিটেন্স বৃদ্ধি পাবে এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সারাদেশে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে। জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট প্রশংসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে- দারিদ্র্য এবং জেন্ডার-বৈষম্য। আমাদের সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে নারীর ক্ষমতায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ জেন্ডার বাজেট প্রণয়নে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে নেতৃস্থানীয় দেশ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও জনসংখ্যাতাত্ত্বিক কারণে আমাদের দ্রুত নগরায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, শহরে টেকসই পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বড় বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ র্যাপিড মাস ট্রানজিট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং রেলভিত্তিক মাস ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। প্রাইভেট সেক্টর এবং এনজিওগুলিকেও হাউজিং এবং অন্যান্য সার্ভিস ডেলিভারি যেমন স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও সরকার বাস্তবায়ন করছে। এলক্ষ্যে, সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ড ও বেসরকারি কমিশনকে একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) গঠন করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য কৃষিতে পরিবর্তন একান্তভাবে প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষিতে জলবায়ু ও দুর্যোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি প্রতিরোধ ও হ্রাস করার জন্য আমরা টেকসই ও উৎপাদনমুখী কৃষি পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। গবাদিপশু উৎপাদনের পদ্ধতি ও পরিবর্তিত গ্রেইজিং পদ্ধতি প্রবর্তন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একইসাথে আমরা জলবায়ু সহনীয় খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি, লবণাক্ত পানি এবং বন্যা সহনীয় শস্যাদি উৎপাদনের চেষ্টা করছি।
তার সরকারের বাস্তবধর্মী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত এক দশকে আমাদের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এই হার ৭.২৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে আমাদের রপ্তানী আয় ও বিদেশ থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্সের পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় নয় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে যেখানে আমাদের দারিদ্র্যে হার ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আমরা সেই দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। অতি দারিদ্র্যের হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দারিদ্র্র্যের হার ১৪ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেই তার সরকার কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।